Showing posts with label Indigenous and Jaup related article. Show all posts
Showing posts with label Indigenous and Jaup related article. Show all posts

Wednesday, April 17, 2013

রেভা. ইউজিন ই. হোমরিক, সিএসসি

বাণী
জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন উপলক্ষ্যে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। এতদ্সঙ্গে এই সংগঠনের ৫০ বছর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য একটি ‘‘স্মরণিকা’’ প্রকাশ করতে যাচ্ছে জেনে খুশী হলাম। আমি এই সংগঠনের বর্তমান এবং সাবেক সকল নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের শুভেচ্ছা, স্বাগতম এবং অভিনন্দন জানাই।

‘‘কোপেনহেগেন-কানকুন-ডারবান পরিক্রমা’’ সোমনাথ লাহিড়ী


‘‘কোপেনহেগেন-কানকুন-ডারবান পরিক্রমা’’
সোমনাথ লাহিড়ী
জলবায়ু ভাবনায় বর্তমানে কোমায় আচ্ছন্ন আমাদের রাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ, সুশীলসমাজ এবং পরিবেশবাদীরা। কোমা থেকে চেতনা ফিরে আসতে হলে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সে বিষয়ে চিন্তা, সঠিক পরিকল্পনা, অর্থগহবরে পড়ে দিশেহারা, চারিদিকে শুধু নেই নেই.... আর নেই।

আমার বাবার কথা

মৃতঃ পরেশ চন্দ্র মৃ এর সংক্ষিপ্ত জীবন কথা
মুকুল দারু ( মেয়ে)

আজ থেকে প্রায় আশি পচাঁশি বছর পূর্বে মধুপুরের বন ছিল যখন ভরা যৌবনা, বনবাসীদের সবুজে-শ্যমলে লগলগে সিন্ধ রূপের চোখ ঝলসানো রূপের বহারে প্রকৃতি মুগ্ধ আবেশে থমকে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতো ঠিক সেই সময়ে আমার বাবা মানে জয়েনশাহী আদিবাসীর প্রতিষ্ঠাতা মৃতঃ পরেশ চন্দ্র মৃ এর জন্ম। সাল ছিল তখন ১৯২৯। মধুপুর বাসীগন আদিবাসী জাতীর বর্তমান ও ভবিষৎ প্রজন্মের চেতনাতে চির ভাস্বর করে রাখার জন্যে এই কিংবদন্তি মহা পুরুষকে গারো রাজা

Friday, April 12, 2013

ন্যাশনাল পার্ক (জাতীয় উদ্যান)-এর আওতায় আদিবাসীদের ভূমি সমস্যাবলী নিয়ে কিছুকথা


ন্যাশনাল পার্ক (জাতীয় উদ্যান)-এর আওতায় আদিবাসীদের ভূমি
সমস্যাবলী নিয়ে কিছুকথা
মাইকেল সিমসাং
সাবেক চেয়ারম্যান
TWA, মধুপুর থানা শাখা

আমরা টাংগাইল জেলার মধুপুর থানাধীন গড়াঞ্চলে মোগল বা ব্রিটিশ আমল হ’তে আনুমানিক প্রায় দুইশত বৎসর কাল যাবৎ গারো আদিবাসীগণ বসবাস করে আসছে। তৎসঙ্গে প্রত্যেক আদিবাসী পরিবারই বনে ঝুমচাষ করে নিরাপদে-নিরুদ্রপেই যুগ যুগ ধরে কালযাপন করে আসছে। পরিতাপের বিষয় যে, পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ইং সনে ফিল্ড মার্শাল মো: আইয়ূব খাঁন এর ষড়যন্ত্রে পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভণর মো: মোনায়েম খাঁনের সহযোগিতায় ন্যাশনাল পার্ক (জাতীয় উদ্যান) করার জন্য মধুপুর গড়াঞ্চলে অধ্যূষিত আদিবাসী এলাকায় ২০ বর্গমাইল এরিয়া বাস্তবায়িত করার জন্য পাক সরকার পরিকল্পনা করার জন্য গ্রহণ করা হয়। কিন্তু মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসীগণ মোটেই অবগত ছিলনা। পাক সরকার বা বন বিভাগ মনে করতেন, আদিবাসীদের নিজস্ব বলতে এদের দখলে কোন জমি-জমা নাই। সেই প্রেক্ষিতে বিগত ১৯৬৪/৬৫ইং সনে পরেশ চন্দ্র মৃ-এর চুনিয়া গ্রামে মাত্র ৫০,০০০/-হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেওয়ার জন্য উল্লেখ করিয়া ২৪ ঘন্টার মধ্যে সরে যাওয়ার জন্য নোটিশ জারী করে। যখন উক্ত নোটিশ পরেশ মৃ-এর হাতে পৌঁছে তখন এলাকাবাসী আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে। নোটিশ পাওয়ার পর জলছত্র কর্পোস খ্রীষ্টি ধর্মপল্লী মিশনে রেভা: ফা: হোমরিক সিএসসি-র সাথে যোগাযোগ ও আলোচনা করেন এবং সকল গ্রামের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করিয়া দলনেতাদেরকে নিয়ে বনবিভাগ এর কর্মকর্তা DFO ময়মনসিংহ মো: ছালামত আলীর সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিতভাবে অবগত হয় এবং মধুপুর গড়ের সকল আদিবাসীগণ সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ করতে থাকি। বাবু পরেশ চন্দ্র মৃ-এর আহবানে বিভিন্ন গ্রামের নেতৃবৃন্দের লোক তাহার বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যেকোন ভাবেই হোক আমরা সকল আদিবাসীগণ জাতীয় উদ্যান পরিকল্পনা প্রতিরোধ গড়ে তুলব। তারপর বিভিন্ন জ্ঞানী ব্যক্তি বা আইনজীবিদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করে শেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়-একটি সংগঠনের মধ্য দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ১৯৬৫ইং সনে জলছত্র কর্পোস খ্রীষ্টি ধর্মপল্লী মিশনের পাল-পুরোহিত রেভা: ফা: ইউজিন হোমরিক, সিএসসি-র নির্দেশে এবং পরেশ চন্দ্র মৃ-এর নেতৃত্বে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটির নাম নিয়ে ‘জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন গঠন করা হয়। কার্যকরী কমিটির সদস্যবৃন্দ হলেনঃ (১) পরেশ চন্দ্র মৃ (২) নরেন্দ্র নকরেক (৩) রনিল মাংসাং (৪) দেবেন্দ্র দফো, সাং-চুনিয়া (৫) জীবন কুমার নকরেক (৬) মনিন্দ্র নকরেক, সাং-পীরগাছা (৭) মাইকেল সিমসাং (৮) মনতোষ চিরান (৯) পরেন্দ্র মৃ, সাং-সাইনামারী (১০) রামেন্দ্র মৃ, সাং-থানারবাইদ (১১) পিটার জনিল হাগিদক (১২) জেরুম হাগিদক (১৩) সতেন চিরান (১৪) মনিন্দ্র দফো, সাং-বেদুরীয়া (১৫) নিশিকান্ত মাজি, সাং-কাকড়াগুনি (১৬) জরেন্দ্র ম্রং (১৭) গাম্ভো রেমা, সাং-জয়নাগাছা (১৮) রাজেন্দ্র নকরেক, সাং-সাধুপাড়া (১৯) পনেশ নকরেক (২০) জাসেন নকরেক, সাং-গায়রা (২১) জ্ঞানেন্দ্র ম্রং (২২) জিনেন নকরেক (২৩) ক্ষিতিশ রেমা, সাং-বাগাডোবা (২৪) প্রকাশ মৃ, সাং-ভূটিয়া (২৫) বিশ্বনাথ চাম্বুগং, সাং-আমলীতলা। তারপর যোগাযোগের জন্য কিভাবে আর্থিক সংগ্রহ করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা ক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যারা কার্য্য-কমিটির সদস্য হলেন তারা নিজ নিজ এলাকা হ’তে চাঁদা কালেকশন (সংগ্রহ) করে কর্পোস খ্রীষ্টি ধর্মপল্লী মিশনের পাল-পুরোহিতের নিকট জমা রাখবে এবং সেখান হ’তে প্রয়োজন মত উত্তোলন করে নেওয়া যাবে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ না করলেই নয়, পাকিস্তান সরকার ও বন বিভাগের কর্মকর্তাগণ মনে করেছিলেন যে, মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসীদের নিজস্ব বলতে কিছুই নাই, স্বত্ত্ব-দখলীয় রেকর্ডকৃত নামা/কান্দা জমি। কিন্তু অধিকাংশ আদিবাসী পরিবারই দুটি ডকুমেন্ট ছিল। যেমন-দখলস্বত্ত্বের (১) চাংমহালের চারটি দাখিলা (২) সাল হালের দাখিলা এবং সেই সাথে মাঠপর্চা সইমহুরী এবং ক্রয়মূলে দলিল ও পত্তননামা এমনকি কতিপয় আদিবাসী পরিবারের নিকট ব্রিটিশ আমলের সি.এস, আর.ও.আর এবং আর.এস কাগজপত্রাদিও আছে এবং বর্তমানেও তাহা বিদ্যমান আছে। এরপর উক্ত সংগঠনের মাধ্যমে পরেশ চন্দ্র মৃ-এর নেতৃত্বে ৬ সদস্য বিশিষ্ট পাবর্ত্য চট্টগ্রাম মগরাজ অংশু প্রু চৌধুরীর সাথে ন্যাশনাল পার্ক বিষয়ে আলোচনা করি। তিনি বলেন, তোমাদের একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে এবং সোচ্চার হতে হবে। তিনি আরও বলেন, যদি তোমরা এলাকার আদিবাসীদেরকে লইয়া প্রতিরোধ গড়ে তোল, তাহা হইলে তোমাদেরকে উচ্ছেদ করতে পারবেনা। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর মো: মোনায়েম খাঁন ফিল্ড মার্শাল মো: আইয়ূব খাঁন ভূলভাবে অবগতি দিয়েছিলেন যে, গারো আদিবাসীদের কোন ঘরবাড়ী নেই। তারা গাছের উপরে মাচাং তৈরি করে সেখানে বসবাস করে থাকে। যখন আদিবাসীগণ উচ্ছেদ নোটিশ পাওয়ার পর হ’তে সোচ্চার হয়, তখন পাক সরকার উচ্চ মহলের অফিসার তদন্তের নিমিত্তে সরেজমিনে পাঠিয়ে দেন। সেই সময়ে প্রথমে চুনিয়া গ্রামে পরেশ মৃ-এর বাড়ীতে উপস্থিত হয়। তখন দেখা গেল তারা এসেই এদিক-সেদিক লক্ষ করতে লাগলেন। তখন জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা না বসেই এদিক-সেদিক কি দেখছেন। তখন তারা উত্তর দিলেন, কোথায় আপনাদের গাছের উপরে মাচাং ঘর? আমরা প্রশ্ন করলাম, কি মনে করেন। তখন বিস্তারিত ভাবে আমাদেরকে অবহিত করলেন যে, আমাদের জন্য বন বিভাগ পক্ষ হতে বলেছিলেন আপনাদের স্বত্ত্ব-দখল বলতে কিছুই নাই। তাছাড়া আপনারা বনে-জঙ্গলে গাছের উপরে মাচাং তৈরি করে বসবাস করে আসতেন। সরেজমিনে দেখা যাচ্ছে আপনাদের সবই আছে; আপনাদের টিনের ছাউনি বড় বড় মাটির দালান, যাবতীয় বাগান, যেমন-আনারস, বাঁশ, কলা ও অন্যান্য ফলফলান্তির গাছ। ইহা ছাড়াও উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে স্বত্ত্ব-দখলীয় কাগজপত্র দেখে তদন্তকারীগণ মন্তব্য করলেন আপনাদেরকে বিনা ক্ষতিপূরণে বিতাড়িত করতে পারবে না। এরপর তদন্তকারী দল ফিরে গিয়ে যাহা বাস্তবে প্রত্যক্ষ করলেন, বিস্তারিত জনিলেন তাই সরকার প্রধানকে প্রকাশ করেন।

এরপর আদিবাসীগণ সরেজমিনে গিয়ে ত্রিদলীয় ভাবে সার্ভে করার জন্য জোর দাবী করে। সেই প্রেক্ষিতে বিগত ১৯৬৬/৬৭ ইং সনে পাক সরকার পক্ষ হতে ত্রিদলীয় (১) রেভিনিও বাজস্ব বিভাগের এসিল্যান্ড কর্তৃক (২) বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার কর্তৃক ও আদিবাসী নেতৃবৃন্দগণকে লইয়া যৌথভাবে সরেজমিনে এসে সার্ভে করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর রাজস্ব বিভাগের সার্ভেয়ার বা আমীন সহ ৪/৫ জন, বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার সহ ৪/৫ জন ও আদিবাসী নেতৃবৃন্দ পক্ষ হতে ৮/১০ জন প্রতিনিধি সহ ৫ মাস যাবৎ প্রতিটি গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে সরেজমিনে চেইন (শিকল) দিয়ে পরিমাপ সহ যাহার যা দখলস্বত্ত্বের কাগজপত্র সহ সংগ্রহ করেন। তাছাড়াও কোন পরিবারের কয়টা ঘরবাড়ীর কত ফিট এবং বাঁশ, কলা, আনারস বাগান ও বিভিন্ন ফলের গাছ সংখ্যা ইত্যাদি সংগ্রহ করিয়া দিনের শেষে তিন দলের যৌথ স্বাক্ষর করেন। এইভাবে প্রতিটি গ্রামে, যেমন: চুনিয়া, পীরগাছা, সাইনামারী, থানারবাইদ, বানরিয়া, বাগাডোবা, মহিষমারা, জালিচিড়া, কাইলাকুড়ী, হাগুড়াকুড়ী, জয়নাগাছা, বেদুরীয়া, কাকড়াগুনি, সাধুপাড়া, জালাবাধা, গায়রা, জলই, টেলকী, বিজয়পুর ও ভূটিয়া গ্রাম মোট-২০টি গ্রাম নিয়ে ৪/৫টি মাস যাবৎ সার্ভেয়ার করা হয়। পরিমাপের শেষে রাজস্ব বিভাগের অফিসারের মাধ্যমে তিন কপি রিপোর্ট দাখিলের জন্য প্রস্ত্তত করেন এবং রিপোর্ট দাখিলের কপিতে পুনরায় যৌথ স্বাক্ষরে রাজস্ব বিভাগে ১ কপি, বন বিভাগে ১ কপি ও জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদে ১ কপি জমা দেওয়া হয়। সার্ভেয়ার রিপোর্টে দেখা গেল, একমাত্র পরেশ চন্দ্র মৃ-এর রেকর্ডকৃত নামা জমি বাদ দিয়ে শুধু কান্দা জমিতে আনারস, কলা, বাঁশ, আম, কাঁঠাল বাগান সহ অন্যান্য ফলফলান্তি গাছের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসাবে আনুমানিক ৫০/৬০,০০,০০০/-লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হইলে ২০টি গ্রামের প্রত্যেক পরিবারকে কতশত কোটি টাকা দিতে হবে। উক্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর বন বিভাগ কর্তৃক পাক সরকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য অপারগ হয়ে উচ্ছেদের পরিবর্তে পূনর্বাসন দেওয়ার জন্য ঘোষণা করেন। বন বিভাগের পক্ষ থেকে ৯নং অরণখোলা ইউনিয়নের ভিতর ফুলবাগচালা মৌজাকে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করলে পর আমরা অর্থাৎ আদিবাসীগণ উহা প্রত্যাখান করি এবং ফুলবাগচালা মৌজার পরিবর্তে বেরীবাইদ মৌজার জন্য জোর দাবী করতে থাকি। তারপর আমরাও উক্ত মৌজার দাবীতে নাছোরবান্দা; বন বিভাগের পক্ষ থেকে দিতে নারাজ। এইভাবে উভয় পক্ষেই রশি টানাটানি চলতে থাকে। পরম করুণাময়ের কি অপার মহিলা-বিগত ১৯৭১ ইং সনে বাংলাদেশাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্থাপিত হওয়ার পর পার্ক সমস্যা নিয়ে কিছুটা হইলেও সুস্থ বোধ মনে করলাম। পরবর্তী সময়ে ১৯৭২/৭৩ইং সনে জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবরের নিকট আমাদের দাবী-দাওয়া পেশ করি। আমাদের প্রতিবেদন ধৈর্য্য সহকারে দেখে তিনি আমাদেরকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, আদিবাসীগণকে উচ্ছেদ করে আমি ন্যাশনাল পার্ক রচনা করতে পারবনা। যে যেখানে আছ সেখানেই থাকতে পারবে। পরেশ বাবুর বক্তব্য-‘‘আমরা বনেরই সন্তান, বন ছাড়া আমরা থাকতে পারবনা।’’ পার্ক এলাকায় আদিবাসী জনগণের ভূমি সমস্যা নিয়ে কয়েকটি জোর দাবীসমূহঃ

01.             বংশ পরম্পরায় আমাদের বাবা, দাদা-দাদীরা যেখানে ছিল আমরাও সেখানেই থাকতে চাই।
02.            টাংগাইল জেলার মধুপুর গড়াঞ্চলে প্রায় ২০,০০০ হাজার আদিবাসী বসবাস করতেছিল। তদোপরি নানাভাবে বনবিভাগ কর্তৃক দখলীয় ভূমি হইতে উচ্ছেদের সন্মুখীন হচ্ছে। সেখান থেকে অব্যাহতি পাওয়া।
03.            স্মরণাতীত কাল হইতে আদিবাসীগণ স্বত্ত্ব-দখলীয় সূত্রে ভোগ দখল করে আসছে। আদিবাসীদেরকে হয়রানী মূলক দায়েরকৃত ২৬ক(এ)২৬ ক(ই) ধারা মোতাবেক মোকদ্দমা রজ্জু করা হইতে অব্যাহতি পাওয়া।
04.             আইএলও (ILO) কন্ভেনশনের ১০৭ ধারা অনুসারে আদিবাসীদের মানবাধিকার মতে ভূমি সমস্যাবলী নিয়ে দাবী-দাওয়া সংক্রান্ত বলবৎ রাখা।
05.            ১৯৮০ইং সনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সময়ে আইন মন্ত্রী বাবু মনোরঞ্জন ধর এর পরামর্শে বাদী নরেন্দ্র সাংমার নামে বৈধ সি.এস কাগজপত্র সহ ঢাকা হাইকোর্টে সুধাংশু শেখর হাওলাদার (এডভোকেট) এর পরিচালনায় মোকদ্দমা দায়ে করা।
06.            ১১/০৫/৮১ইং সনে ঢাকা হইকোর্ট হইতে টাংগাইল জর্জ কোর্টে বাবু সুখরঞ্জন সরকার (এডভোকেট) এর মাধ্যমে পুনরায় মোকদ্দমা দায়ের করা হয়। পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমানে জর্জকোর্টে মোকদ্দমা তদবিরের অভাবে মুলতবী অবস্থায় পড়ে আছে।

পরিশেষে বলতে চাই, কালের প্রবাহে ১৯৭৫ইং সনে জাতির পিতা বন্ধবন্ধু শেখ মজিবর রহমান এর হত্যার পর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর সামরিক মার্শাল ল জারী করেন। সেই সময়ে টাংগাইল জেলায় বিগ্রেডিয়ার জনাব মোক্তাদী রহমান জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকাকালীন মি. প্রমোদ মানকিন কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন এবং বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরেশ চন্দ্র মৃ, মাইকেল সিমসাং, জেরুম হাগিদক ও অন্বেষণ চিরান ৫ সদস্য বিশিষ্ট টাংগাইল সদরে গিয়ে মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসীদের ন্যাশনাল পার্ক সমস্যাবলী নিয়ে আলোচনা করি। বিস্তারিত আলোচনার পর তিনি বলেন, আপনাদেরকে কোনক্রমেই উচ্ছেদ করা হবে না।

উল্লেখ্য যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান-এর পরবর্তী সরকারের দায়িত্বে বিগ্রেডিয়ার জনাব মোক্তাদী রহমানের ঘোষণায় মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসীগণ যেমন আছি; ভবিষ্যতেও আমরা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।



পরেশ চন্দ্র মৃ এর সংক্ষিপ্ত জীবন কথা


আমার বাবার কথা
মৃতঃ পরেশ চন্দ্র মৃ এর সংক্ষিপ্ত জীবন কথা
মুকুল দারু ( মেয়ে)

আজ থেকে প্রায় আশি পচাঁশি বছর পূর্বে মধুপুরের বন ছিল যখন ভরা যৌবনা, বনবাসীদের সবুজে-শ্যমলে লগলগে সিন্ধ রূপের চোখ ঝলসানো রূপের বহারে প্রকৃতি মুগ্ধ আবেশে থমকে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতো ঠিক সেই সময়ে আমার বাবা মানে জয়েনশাহী আদিবাসীর প্রতিষ্ঠাতা মৃতঃ পরেশ চন্দ্র মৃ এর জন্ম। সাল ছিল তখন ১৯২৯। মধুপুর বাসীগন আদিবাসী জাতীর বর্তমান ও ভবিষৎ প্রজন্মের চেতনাতে চির ভাস্বর করে রাখার জন্যে এই কিংবদন্তি মহা পুরুষকে গারো রাজা