Wednesday, April 17, 2013

‘‘কোপেনহেগেন-কানকুন-ডারবান পরিক্রমা’’ সোমনাথ লাহিড়ী


‘‘কোপেনহেগেন-কানকুন-ডারবান পরিক্রমা’’
সোমনাথ লাহিড়ী
জলবায়ু ভাবনায় বর্তমানে কোমায় আচ্ছন্ন আমাদের রাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ, সুশীলসমাজ এবং পরিবেশবাদীরা। কোমা থেকে চেতনা ফিরে আসতে হলে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সে বিষয়ে চিন্তা, সঠিক পরিকল্পনা, অর্থগহবরে পড়ে দিশেহারা, চারিদিকে শুধু নেই নেই.... আর নেই।
কোপেনহেগেন-কানকুন-ডারবান সম্মেলন হয়ে গেল উন্নত, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অভিযোজন নিয়ে আলোচনা না করে কবে থেকে প্রশমনের কথা ভাবতে হবে সেই বিষয় সমূহ নিয়ে কথা হয়েছে, কারণ বড় বড় রাষ্ট্র দূষণ ঘটাবে এবং দূষণের প্রতিষেধক হিসেবে গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ডের মাধ্যমে এলডিসি চিহ্নিত রাষ্ট্রসমূহকে ভ্যাকসিন প্রকাশ করবে, তাও আবার রাষ্ট্রের বড় ভাই World bank এর প্রভুতব স্বীকার Presorption এর মাধ্যমে। পরিবেশবাদীরা সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে আন্দোলন করছে, মহাপ্রভুরা ভেতরে বসে তাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তি উপর আস্থা রেখে নিজেদের রাষ্ট্রের মহাশক্তিধর ব্যবসায়িদের বাঁচাতে কথা বলছেন। তাঁরা জানেন ব্যবসায়িরা বাঁচলে রাষ্ট্র ক্ষমতাধর যারা আছেন তাঁরা থাকবেন, সাধারণ জনগণের কথা তাঁরা আগের মতই নিজেরাই ভাবতে পারবে।
কোপেনহেগেন আলোচনা হলো গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরন নিয়ন্ত্রণে আইনী কাঠামো তৈরী করতে হবে শুরু হবে, Climate Justice নিয়ে পাঁচতারা হোটেলে আলোচনা-পর্যালোচনা, রাষ্ট্র বিশেষজ্ঞরা বসলেন, রাত্রীযাপন করলেন, পরিশেষে যার যার জায়গায় চলে গেলেন।
এরপর কানকুনে কিয়োটা প্রটোকল নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হলো, কার্বন নিঃসরন ৪৫% কমাতে হবে বলে নিঃসরন যুক্তরাষ্ট্রসমূহ ভাবছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীন, ভারত, ব্রাজিল কার্বন নিঃসরন কমানোর ব্যাপারে অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে একমত, একপথে হাঁটতে অপরাগতা প্রকাশ করলেন। শেষ হলো কাককুন... শুরু হলো আবার সেই বিশেষ স্থানে ক্লাইমেট ট্রাইবুনাল নিয়ে আলোচনা, বিশেষজ্ঞরা মতামত দিলেন হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন।
বিগত বৎসরে ভিতরে আলোচনা ও বাইরে পূর্বের ন্যায় আন্দোলনের মাধ্যমে সমাপ্ত হলো ডারবান সম্মেলন। কি হলো পরিশেষে...? চুক্তি নয় সমঝোতায় এসেছে উন্নত বিশ্বের প্রতিনিধিরা...২০১৫ সালের আগে কোন চুক্তি নয়, অর্থাৎ ‘‘দূষণকারীরা দূষন করো জনগণকে মেরে ফেলো’’। ২০২০ সালের মধ্যে চুক্তি কার্যকর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে আবার ১৯৯৭ সনের কিয়োটা প্রটোকলের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০১২ সালে, এই প্রটোকলের মেয়াদ ৫ বছর বৃদ্ধি করার জন্য সমঝোতা হয়েছে। তাহলে আরও (৫+৩) মোট ৮ বছর নিরলস ভাবে কার্বন নিঃসরন করা যাবে... এতে কারও ক্ষতি হলে গ্রীন ফান্ডের মাধ্যমে দূষণকারী রাষ্ট্র উৎপাদন-ভোগ-বিনিময়ের উপর মূল্য নির্ধারন করে ক্ষতিগ্রস্থ রাষ্ট্রকে অনুদান/দান হিসাবে প্রদান করবে।
আবারও পাঁচতারা হোটেলে এবং আলিশান কনভেনশন হলে ক্লাইমেট ভার্নারেবল ফোরাম গঠন করে বিশদ আলোচনা ও সমালোচনা করে আগামী ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাঁরা বিশ্রামে গেলেন।
দেখা যায় জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কোন আলোচনা সেটি হোক ক্লাইমেট জাস্টিস, ক্লাইমেট ট্রাইবুনাল অথবা ক্লাইমেট ভার্নারেবল ফোরাম এর অধীনে, বিষয় একটাই Give us fund for such Diseaster. পর পর ৩টি সম্মেলন থেকে আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ও সুশীলসমাজ ডারবান ভ্রমন করে এসে শুধু হতাশাই ব্যক্ত করেছেন। শুধু একটি কথাই, তাঁদের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ কিভাবে পাওয়া যেতে পারে...। ক্ষতি প্রশমনে আমাদের দেশে কি কি ধরনের সম্পদ রয়েছে, সেই Checklist কিন্তু আমাদের কাছে Proper fornulative পর্যায়ে নেই। স্বল্পোন্নত দেশসমূহ একত্র হয়ে যদি তহবিল গঠনের পাশাপাশি নিজেদের স্থানীয় সম্পদের মাধ্যমে অভিযোজন কথা বলতে পারতো তাহলে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রসমূহ এ ধরনের হাস্যকর সমঝোতায় আসতে পারতো না। কারণ তাঁদের ভাবনার বিষয় হতো ব্যবসা করার জায়গা বুঝি হারাতে হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে রাষ্ট্রের সংগে রাষ্ট্রের, রাষ্ট্রের ভিতরে জনগণের সাথে এক ধরনের লুকোচুরি খেলা হচ্ছে। যেখানে ক্লাইমেট পলিটিক্স এবং মুক্তবাজারনীতি একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। যেমন ভারতে কার্বন নিঃসরন করছে, বাংলাদেশ বৃক্ষরেপন এর মাধ্যমে কার্বন কনজিউম করে তার পরিমাণটি শুধু কাগজের মাধ্যমে ট্রেড করবে করে ব্যাক যাকে কার্বন ক্রেডিট বলেন বিশেষজ্ঞরা। আবার মুক্তবাজারনীতির অধীনে ভারতের পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানী করে (বেশিরভাগ বিলাসী পণ্য) বাংলাদেশ কার্বন ট্রেডিং এর মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা গ্রহণ করলে ভারত বিলাসী ব্যবসা করে ৫ কোটি টাকা আমাদের দেশ থেকে নিয়ে যাবে। তাহলে বাংলাদেশের কি হলো...! তাই কোপেন হেগেন থেকে কি পেলাম, কানকুন থেকে কি লাভ হলো, আবার ডারবান থেকে প্রাপ্তির আশাকে পাশে রেখে আমাদের এই ডেলটাকে রক্ষা করার জন্য এখনই উপায় বের করে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা প্রয়োজন সব রাষ্ট্রই চায় তার জনগণ ভাল থাকুক, দুর্যোগবিহীন জীবন যাপন করুন, কিন্তু ১ম যেটি করতে হবে সেটি হচ্ছে পরিবাদী বিশেষজ্ঞদের গ্রীন হাউস অ্যাক্টেট এর ভয়ে ঠান্ডা ঘরে না রেখে এই ডেলটার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে চষে বেড়াক, দেখা যাবে বিভিন্ন ধরনের অভিযোজন.... সাধারণ মানুষ তাঁর প্রকৃতি লব্ধজ্ঞান থেকে জীবন বাঁচানোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আসুন মাননীয় রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ দল এবং বর্তমান সময়ের সুশীল সমাজ এই প্রকৃতি লব্ধ জ্ঞানকে বিজ্ঞানের আলোকে দেখে, আইনী পরিসেবার মাধ্যমে, জনগণের সক্রীয় অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করে একটি পরিবেশ বান্ধব দেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করি। যেখানে থাকবেনা রাজনীতি, থাকবেনা লাভ ক্ষতির হিসাব, শুধু থাকবে সবুজ পৃথিবী গড়ার অঙ্গিকার।

No comments: