Wednesday, February 8, 2017

Garo Low

Mv‡iv AvBb
সংকলন
ফাদার গিলিয়ো কস্তা, এসডিবি
এভভোকেট জাংসান সাংমা, এম., এলএলবি
সম্পাদনা ভাষান্তর
সুভাষ জেংচাম (সাংমা), ইপিসিএস(অবসরপ্রাপ্ত)

দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো যদিওবা কোন লিপিবদ্ধ আইন গারোদের নেই, তথাপি তাদেরকে কোনভাবেই আইনবর্জিত জাতি হিসেবে গণ্য করা যাবেনা। বরং গারোদের এমন কতগুলো অলিখিত সামাজিক অনুশাসন রয়েছে যা তারা দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সর্বক্ষেত্রে সর্বতোভাবে মেনে চলার চেষ্টা করে। মাত্র তিনটি শব্দের মাধ্যমে গারোরা তাদের এই সামাজিক অনুশাসন প্রকাশ করে থাকে যা তাদের দৈনন্দিন জীবনচর্চাকে গভীরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। শব্দ তিনটি হচ্ছে-আসিমাল্‌জা, দাক্‌মালজা এবং নিম্‌আ।

Avwmgvj&Rv;Rv 

এই শব্দের প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যা করা বেশ কঠিন। কিন্তু এটি এমন একটি শব্দ, যে শব্দের কেবল উচ্চারণই যেকোন গারোকে যেকোন রকম পাপকর্ম অথবা সমাজ বিগর্হিত কাজ হতে নিবৃত্ত রাখতে যথেষ্ট। কথিত আছে যে, পুরাকালে কোন এক স্থানে আসি নামে এক মহিলা ছিল। তার ¯^vgxi  নাম ছিল মাল্‌জা। এক সময়ে তারা উভয়েই এক মারাত্মক পাপে লিপ্ত হয়, যার ফলে উভয়েই অপঘাতে মারা যায়। আসি বাঘের হাতে মারা যায় এবং ¯^vgx  মাল্‌জা কুমিরের হাতে নিহত হয়। সেই হতে গারো সমাজে এই বিশ্বাস সংস্কার চলে আসছে যে, যদি কেউ কোন মারাত্মক পাপে লিপ্ত হয়, তবে তার অপঘাতে মৃত্যু অনিবার্য এবং সেরকম অপঘাতে মৃত ব্যক্তির মৃতদেহের কোনরকম আনুূষ্ঠানিক সৎকার নিষিদ্ধ। অতএব, তার বিদেহী আত্মাও পরকালের সর্বপ্রকার শান্তিলাভ হতে বঞ্চিত। রকম পাপে লিপ্ত ব্যক্তিকে আইন আদালতে বিচারের কোন প্রয়োজন পড়েনা, বিবেক দংশনই তার উপযুক্ত শাস্তি এবং এক্ষেত্রে দেবতা (মিত্তে) বিশেষ করে সাল্‌জংও সুসিমে (সূর্য-চন্দ্র) তাদেরকে চরম শাস্তি প্রদান করে থাকেন।


দেবতাদের ক্রোধের সঞ্চার করে এবং দোষী ব্যক্তিকে সমাজের সর্বসাধারণের চোখে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন সব আসিমাল্‌জা পাপের বর্ণনা নিম্নে বর্ণিত হলঃ
০১. মারাং ওয়াত্তানি সাল্‌রাংকু মানিগিজানি (ধর্মীয়ভাবে dj¯^iƒcপবিত্র দিনগুলোকে অবজ্ঞা করা)
ধর্মীয়ভাবে ¯^xK…Z  পবিত্র দিনগুলোকে মানা এবং পবিত্রভাবে পালন করা সকলের অবশ্য কর্তব্য। কেউ যদি এর ব্যতিক্রম করে তবে তার পাপের dj¯^iƒc সারা গ্রামবাসীকে দেবতার কোপানলে পতিত হতে হবে এবং গ্রামে নানাবিধ দৈব দুর্বিপাক দেখা দিবে

০২. কেগিজা খিম্‌আনি (নিষিদ্ধ সম্পর্কে বিবাহ)

নিজ উপগোত্রের মধ্যে বিবাহ অর্থাৎ নিজ মাহারীর মধ্যে বিবাহ গারো সমাজে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। যেমন-কোন Pv¤^yMs  ছেলে কোন Pv¤^yMs  মেয়েকে বিয়ে করতে পারেনা। যতই অনাত্মীয় কিংবা দূর সম্পর্কের হোক না কেন বর-কনে একই মাহারীভূক্ত (উপগোত্র)হতে পারেনা। কারণ সম্পর্ক যাই থাকুক না কেন, একই মাহারীভূক্ত হলে গারোরা পরস্পর পরস্পরকে ভাই-বোনতুল্য মনে করে। অতএব, একই উপগোত্রের মধ্যে বিবাহ গারোদের সংস্কারে আসিমাল্‌জার সমপর্যায়ভূক্ত।  
০৩. সিল্লা খিম্‌আনি (বৈবাহিক সূত্রে নিষিদ্ধ সম্পর্কিত ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ)
গারোদের সামাজিক সংস্কার অনুসারে কেউ স্ত্রীর বড় বোনকে, ছোট ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারেনা। এছাড়াও মাসী অথবা কাকিমা সম্পর্কের কাউকে বিয়ে করতে পারেনা। একইভাবে কোন মহিলা নিজ ছোট বোনের বিপত্মীক ¯^vgx‡K  বিয়ে করতে পারে না। কারণ গারোদের সামাজিক সংস্কারানুযায়ী এগুলো আসিমাল্‌জার সমপর্যায়ভূক্ত।
০৪. আক্রিং গ্নাংগিপা আকু পিআনি (দেবদেবীর আবাস হিসাবে পরিগণিত স্থান হতে বাঁশ, কাঠ প্রভৃতি আহরণ)
গারোরা যদিও তাদের উপাস্য দেবদেবীর উদ্দেশ্যে স্থায়ী কোন মন্দিরাদি নির্মাণ করেনা, তথাপি তারা বিশ্বাস করে থাকে যে, লোকালয়ে কাছাকাছি এমন কতগুলো স্থানে দেবদেবীরা তাদের নিজেদের আবাসস্থল বেছে নেয় যেখান হতে তারা অনায়াসে গ্রামের লোকজনের কার্যকলাপ এবং গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রাখতে পারে। ঐসব স্থান অর্থাৎ দেবদেবীর আবাসভূমি হিসেবে চিহ্নিত স্থানকে গারোরা সযত্মে এবং সসম্ভ্রমে পরিহার করে চলে। কেউ ভুলেও ঐসব স্থান হতে কাঠ-বাঁশ প্রভৃতি আহরণ করেনা। কারণ গারোদের সংস্কারে ঐসব স্থান হতে কোন কিছু সংগ্রহ অথবা আহরণ করা আসিমাল্‌জার সমপর্যায়ভূক্ত এবং পরিণতিতে দেবদেবীর কোপের কারণ জন্মাবে।
০৫. কুশি বল্‌গ্রিম্‌নী বল্‌ ওয়ারাংখু দেন্‌নী জাক্‌খালানী (বিশেষভাবে পবিত্রীকৃত স্থান হতে সাধারণ ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য বাঁশ-কাঠ প্রভৃতি সংগ্রহ করা)
বিশেষ বিশেষ পূজা-পার্বণ উপলক্ষে বেদী নির্মাণ, অস্থায়ী চালাঘর তৈরি প্রভৃতি কাজে ব্যবহারের জন্য কেবলমাত্র বিশেষভাবে পবিত্রীকৃত নির্দিষ্ট স্থান হতে বাঁশ-কাঠ প্রভৃতি সংগ্রহ করতে হয়। বিশেষভাবে পবিত্রীকৃত স্থানকে গারো ভাষায় কুশি অথবা আসং বলা হয়। সাধারণ ঘরোয়া কাজের জন্য যে কেউ স্থান হতে কোন কিছু আহরণ করতে পারেনা। যদি কেউ করে তবে গারোদের সামাজিক সংস্কার অনুসারে উহা আসিমাল্‌জার পর্যায়ে পড়বে, যার ফলে সমগ্র গ্রামের উপর দেবতাদের অভিসম্পাত নেমে আসতে পারে।
০৬. আসংনি রংখু জাক্‌খালানী (পবিত্র স্থানের পবিত্র পাথর সরারো কিংবা অপব্যবহার করা)
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে পবিত্র স্থানের পবিত্রীকৃত পাথর অন্যত্র স্থানান্তর করে অথবা অপব্যবহার করে তবে উহা পবিত্র স্থানকে অবমাননা করার সমতুুল্য হবে এবং গারোদের সামাজিক সংস্কারে সেটি হবে আসিমাল্‌জা ভঙ্গের সমতুল্য অপরাধ। কারণ সব পাথরে যদিও দেবদেবীগণ স্থায়ীভাবে অবস্থান করেন না তথাপি তারা অবমাননাকারীকে বিনা দন্ডে রেহাই দেবেন না।
০৭. মিত্তেনা নক্‌মানি দান্‌গিপা বস্তুরাংখু রাম্‌রাম্‌ জাক্‌খালানী (দেবদেবীর উদ্দেশ্যে গ্রাম প্রধান কর্তৃক উৎসর্গীকৃত বস্তুসমূহের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন)
এখানে উৎসর্গীকৃত বস্তুসমূহ বলতে আকিং নক্‌মা (এলাকা প্রধান) কর্তৃক বিশেষ দেবতার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত বেদী অথবা পাথরকে বুঝাবে এবং পাথর অথবা বেদীকে অবজ্ঞা কিংবা অবমাননা করা সংশ্লিষ্ট দেবতাকে অবজ্ঞা অথবা অবমাননা করার সামিল হবে। ফলে সমগ্র আকিং অর্থাৎ এলাকার উপরে দেবতার কোপানল পতিত হবে, যা গারোদের সামাজিক সংস্কারে আসিমাল্‌জা বলে পরিগণিত।
০৮. থঅলে দেপান্থে থাংনি স্খুকো রিম্মে মিখ্‌চেৎআনি (নিজ সন্তানের মাথায় হাত দিয়ে মিথ্যে শপথ করা)
কোন মিথ্যা দোষারোপের জন্য গারোরা যখন শপথ করে তখন তারা নিজের নির্দোষিতা প্রমাণের জন্য ¯^xq  সন্তানের মস্তকে হস্তস্থাপনপূর্বক দেবদেবীকে ¯^v¶x  রেখে সবার সামনে শপথ গ্রহণ করতেও দ্বিধা করেনা, অথচ যা অনুচিত এবং গারোদের সামাজিক সংস্কারে আসিমাল্‌জার সামিল। কারণ ¯^xq  সন্তানের মস্তকে হস্তস্থাপনপূর্বক দেবদেবীকে ¯^v¶x  রেখে শপথ করা মানে ¯^xq সন্তানের মৃত্যু কামনা করা।
০৯. আহায়েগিজা, ওয়ান্‌গাল্‌গিজা আবানি গিত্তাল বিথেরাংখু চানাংগিজানী (ক্ষেতে উৎপন্ন প্রথম ফসল দেবদেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ না করা)
ঝুমক্ষেতে উৎপাদিত প্রথম ফসল দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে আহার করা গারোদের চিরাচরিত রীতি। এর কোন ব্যতিক্রম করা মানে সামাজিক সংস্কারের পরিপন্থী কাজ করা অর্থাৎ আসিমাল্‌জার কাজ, পরিণামে গ্রামে দুর্ভিক্ষসহ নানা দৈব দুর্বিপাকের প্রাদুর্ভাব ঘটবে। অতএব, গ্রামের কেউ যাতে এরকম ভুল না করে বসে গ্রামবাসীকে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখে।

উপরে বর্ণিত অপরাধগুলো যেকোন একটির অপরাধীকে তার সমাজের লোকেরা যদিও সরাসরি শাস্তি প্রদান করে না কিংবা শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থাদি গ্রহণ করে না, তথাপি সেই অপরাধী নিজের AvZ¥xq¯^Rb, মাহারীর লোকজন, গ্রামবাসী সমাজের অন্যান্য যারা তার এই অপকর্মের কথা শুনেছে তাদের চোখে অত্যন্ত হেয় প্রতিপন্ন হয়ে থাকে, যা আনুষ্ঠানিক বিচারে প্রাপ্ত দন্ডের তুলনায় কোন অংশে কম নহে।


No comments: